রিফারবিশড ল্যাপটপ কেনার পূর্বে - যেসব বিষয়ে আপনাকে সতর্ক হতে হবে।
![]() |
রিফারবিশড ল্যাপটপ |
রিফারবিশড, রিনিউড, রিপেয়ার্ড - শব্দগুলো মোটামুটি আমাদের সকলের কাছেই পরিচিত। কিন্তু কনফিউজড্ হই তখন, যখন জানতে ইচ্ছে করে এগুলো আলাদা আলাদা উপস্থাপনের মানেটা কি?
এককথায় যদি বলি, তা হলে বলবো একই জিনিষ ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকা অথবা চালাকী করে নাম দেয়া। ঐ যে আমরা দেখেছি, মাল্টি লেবেল মার্কেটিং, নাম বদলিয়ে এখন হইছে - নেটওয়ার্ক মার্কেটিং!
..না, ...না, শুধু যে, আমরা বাংলাদেশীরাই পুরোনো ইলেকট্রনিক্স পন্যের পিঁছনে ছুটছি তা কিন্তু নয়।
উন্নত অনুন্নত সকল দেশেই রয়েছে এই পোড় খাওয়া মালামালের কদর। কথায় বলে, ”ভাঙ্গারী ব্যবসার উপরে ব্যবসা নাই”। অবশ্য একটু স্টাইল করে বলে scrap business । জমির দালালী এখন প্রোপার্টি বা হাউজিং নাম নিয়েছে।
অ্যামাজন, ইবে, আলী এস্কপ্রেস কোথায় বিক্রি হচ্ছেনা রিফারবিশড জিনিষপত্র? নীচের ছবিটি দেখুন-
![]() |
Amazon Renewed Laptops |
৬২৯, ৩০০, ১২০ এমনকি ৯২ ডলারেও মিলছে কাঙ্খিত ল্যাপটপ। কয়েকটি প্রডাক্ট এনালাইসিস্ করে দেখেছি, এগুলোর প্রাইস আমাদের বাংলাদেশের প্রাইসের চেয়েও কম!
আপনি যদি একটি ল্যাপটপ বাজার থেকে কেনার চিন্তা করেন তা হলে প্রথমেই চলে আসে বাজেটের কথা। ল্যাপটপ কেনার আগে কি কাজের জন্য এটি কিনতে চাইছেন সেটাও চিন্তা করতে হবে।
নীচের তিনটি ফেক্টর ভালোভাবে খেয়াল করুন।
![]() |
Refurbished Business Laptop |
বাজেট যদি ঘাটতি থাকে তবে কি করবেন?
রিফারবিশড ল্যাপটপ! আসলে বিষয়টা কি?
ধরুন, আপনি ঢাকার বাজার থেকে একটি ডেল এর নতুন আই থ্রী ৬জেন, ৪ জিবি রেমসহ ল্যাপটপ কিনলেন ৩৮ হাজার টাকায়। ১ বছর ওয়ারেন্টি না যেতেই দেখা গেল সামান্য একটু সাউন্ড, কিংবা ব্লু টুথ এ সমস্যা করছে। আপনি যথারিতি সেলার কোম্পানীর কাছে প্রডাক্টটি দিলেন তারা আপনাকে আরেকটা নতুন ল্যাপটপ দিয়ে দিলো। এখন যে ল্যাপটপটি সেলার কোম্পানী রেখে দিলো সেটার কি হবে?
যেহেতু, এটি একটি নতুন প্রডাক্ট এবং কিছুটা ওয়ারেন্টি প্রিয়ডও আছে - তাই তারা এটিকে সামান্য ঘষাঁ-মাঝা করে করে রিকন্ডিশন বা রিফারবিশড ল্যাপটপ হিসেবে বিক্রি করবে। রিফারবিশড ল্যাপটপ এর এই হইলো কাহিনী।
![]() |
laptop brand - asus dell hp |
রিফারবিশড ল্যাপটপ এর দাম কেমন হতে পারে?
সোজাসুজি বলতে গেলে ৪০ হাজার টাকার পণ্য পেয়ে যেতে পারেন ২৫-৩০ হাজার টাকার মধ্যে। একইভাবে ১ লক্ষ টাকার পণ্য পেয়ে যাবেন ৬০ কিংবা ৭০ হাজার টাকায়!
যাদের বাজেট একেবারেই কম - তারা একটু খোঁজাখুজি করলে আই থ্রী থার্ডজেন/ফোরথ জেন, ৪ জিবি রেমসহ কিনতে পারবেন ১৭-থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে।
এই ধরণের পণ্য কেনার পূর্বে যে বিষয়গুলো ভালো দেখে নিতে হবে তা হলো;
১. দেখে নিন, বডিতে কোথাও কোন ধরনের ভাঙ্গা, ফাটা বা স্ক্রাস দাগ আছে কিনা।
২. ব্যাকআপ আছে কিনা, থাকলে কতো সময় ব্যাকআপ দেয় (মিনিমাম ২ ঘন্টা ভালো)।
৩. সবসময় সার্টিফায়েড সেলার এর থেকে কেনার চেষ্টা করবেন।
৪. ওয়ারেন্টি কতোদিনের আছে, থাকলে সেটা কিধরনের ওয়ারেন্টি?
৫. মিনিমাম ৭ দিনের একটি ফেরৎযোগ্য গ্যারান্টি সেলার এর কাছ থেকে নেয়ার চেষ্টা করবেন, যাতে সমস্যা হলে আপনি টাকা ফেরত নিতে পারেন।
৬. ৭ দিন পর্যন্ত রেনডম চালাবেন। যদি এই প্রিয়ডের মধ্যে কোনরকম সমস্যা না করে, তাহলে আশা করা যায়, আগামী ১ বছরেও সমস্যা করবেনা।
ব্র্যান্ড কোন সমস্যা না। হ্যাঁ, ডেল, আশুস, এইচপি ও লেনোভো সব ব্রান্ডই ভালো।
৭. বিক্রেতা যদি ১ বছরের অধিক এটি ব্যবহার করে থাকে, তাহলে এটি আর রিফারবিশড ল্যাপটপ থাকবেনা, এটি রিপেয়ার্ড ক্যাটাগরিতে পড়ে যাবে। আর সেক্ষেত্রে আপনিও সুযোগ বুঝে দাম বলবেন।
প্রত্যেকটি কম্পোনেন্ট ভালো করে চেক করে দেখবেন, সেগুলো ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা। যেমন, ইউএসবি, ব্লুটুথ, ল্যানকার্ড, সাউন্ড, ডিবিডি, ডিসপ্লে ইত্যাদি।
পণ্যটি কেনার আগে একটু গুগলে মডেলটি লিখে সার্চ করে দেখে নিন, ল্যাপটপটির সাথে কি কি কম্পোনেন্ট আছে।
চেষ্টা করবেন, কোন ব্যাক্তির কাছ থেকে কেনার জন্য যিনি এটি ব্যবহার করেছেন ব্যক্তিগত কাজে, কিন্তু এখন বিক্রি করে দিচ্ছেন আপগ্রেড বা আরেকটি আছে তাই।
কোথায় পাওয়া যায় রিফারবিশড ল্যাপটপ?
ঢাকা শহরের প্রায় প্রতিটি কম্পিউটার শপিং কমপ্লেক্সই এই ধরনের প্রডাক্ট বিক্রি করে থাকে। তাছাড়া বিডিস্টল ওয়েবসাইট, বিক্রয় ডটকম, উত্তরার এইচএমপ্লাজা, সাইদগ্রান্ড, আজমপুর রাজউক শপিং সেন্টার, রামপুরা সুবাস্তু টাওয়ার, মিরপুর শাহআলী মার্কেট ইত্যাদি।
গুগল সার্চ করে দেখতে পারেন, কিন্তু অধিকাংশ সময়ই আমাদের তুলে ধরা ক্রাইটেরিয়াতে নাও পড়তে পারে।
রং এবং চক্ চকা বডি কালার দেখে আপ্লুত হবে না
আমাদের সরিসরি পর্যবেক্ষণে দেখেছি, বিভিন্ন ক্যামিকেল দিয়ে, পাতলা সাদা প্লাষ্টিকে মুড়িয়ে ক্রেতাদের সামনে ল্যাপটপগুলো উপস্থাপন করা হয়, আদতে ভেতরের কন্ডিশন মোটেও ভালো না। মাল্টিপ্ল্যানের দোকানগুলোতে দেখি সাড়াদিনই টেকনিসিয়ানরা ল্যাপটপগুলোকে ঘষামাঝা করছে!
যেকারনে রিফারবিশড ল্যাপটপ ক্রয় করবেন -
- যে ব্র্যান্ড নিজের চিন্তায় ছিলনা, মাঝে মধ্যে সেটিও মিলে যায়।
- মোটামুটি ভালো সিদ্ধান্ত (ব্যক্তিগত মতামত)।
অসুবিধা
- সেলারওয়ারেন্টি দিতে চায়না
- বিক্রি রশিদও দিতে চায়না।
- দুবাই/ইউরোপ/মালয়শিয়া থেকে আসছে বলে চালিয়ে দিচ্ছে।
- খারাপ পণ্যটি ভাগ্যে চলে আসলে বিশেষ কিছু করার থাকেনা।
... তো, এই হলো রিফারবিশড ল্যাপটপ কেনার simple guideline. আপনাদের কারো যদি বাজেট ল্যাপটপ কেনার প্রয়োজন পরে, কিনতে গিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে আছেন, তাহলে আমাদের এই ইমেইল kronlinesolution@gmail.com এ একটি ম্যাসেজ পাঠাতে পারেন। অথবা, হ্যালো করতে পারেন -01623604635 নাম্বারে।