সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার: প্রত্যাশা বনাম বাস্তবতা

সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার: প্রত্যাশা বনাম বাস্তবতা

পৃথীবীর প্রথম সোশ্যাল মিডিয়া ছিল Six Deegrees, ১৯৯৭ সাল, এর প্রণেতা ছিলেন - Andrew Weinreich. পরবর্তী মাইস্পেশ ও তার অল্পসময়ে দ্রুত আসতে থাকে, ফেসবুক, টুইটার, লিঙ্কডিন, ইন্সট্যাগ্রাম সহ ১৫টির শক্তি Social Platform.

সোশ্যাল মিডিয়া হচ্ছে কম্পিউটার ভিত্তিক একটি যোগাযোগ মাধ্যম যা মানুষকে তাদের মতামত ও চিন্তা-ভাবনাকে শেয়ার করার সুযোগ করে দিয়েছে। বর্তমান বিশ্বে প্রায় ৪.৪৮ সোশ্যাল মিডিয়া ইউজার একটিভ আছে। এ সংখ্যা প্রতিনিয়তই বারছে। খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই ২০২৩ নাগাদ এই সংখ্যা ২৫৭ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে বলে বিশেষ্ঝরা মনে করছে। বাংলাদেশে এসংখ্যা প্রায় ৪৫ মিলিয়ন (সুত্র: we are social). চীনে এককভাবে বর্তমান বিশ্বের সবচাইতে বেশী উইজার রয়েছে, এ সংখ্যা - প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন। ভারতে ৪৪৮ এ্যাকটিভ ইউজার রয়েছে।

এই মিডিয়ায় আমরা প্রতিদিন যেসব তথ্য শেয়ার করি এগুলো হলো কনটেন্ট। এই কনটেন্ট আবার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে যেমন টেক্সট, ছবি, ভিডিও, ইমেজ ইত্যাদি।

২০২১ সাল নাগাদ বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি সোশ্যাল মিডিয়া ও ব্যবহারকারীর সংখ্যা

১. ফেসবুক, টোটাল ইউজারস: 2.89 billion

২. ইউটিউব, টোটাল ইউজারস: 2 billion

৩. টুইটার, টোটাল ইউজারস: 206 million

৪. ইন্সট্যাগ্রাম, টোটাল ইউজারস: 1.074 billion

৫. টিকটক, টোটাল ইউজারস: 689 million

৬. পিনটারেস্ট, টোটাল ইউজারস: 478 million

ব্যবহারের এই সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে।

Mobile Social Media

পৃথিবীর সর্বত্রই সোশ্যাল মিডিয়া এতো জনপ্রিয় কেন?

আপনি চাইলে আপনার ব্যক্তিগত দৈনন্দিন যাবতীয় কার্যাবলীর স্ট্যাটাস পরিবারের সদস্য যে যেখানেই থাকুকনা কেন তাদের সাথে ১ মিনিটেরও কম সময়ে সাথে শেয়ার করতে পারেন। মানে ব্যক্তিগত বিষয় থেকে শুরু করে বিশাল বানিজ্যিক সুবিধা রয়েছে এতে।

খুব সহজেই যে কোন পণ্যের প্রচার প্রচারণা চালানো যায় খুব সহজে, খরচে। টিভি বা প্রিন্ট মিডিয়াতে একটি পন্যের বিজ্ঞাপনে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় তার কয়েকগুণ কম খরচ করে বেশী মানুষের কাছে পৌছানো সম্ভব সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার করে। ব্যক্তিগত তথ্য আদান-প্রদানের চেয়ে মানুষ ব্যবসায়িক কাজেই এই প্ল্যাটফরমটি বেশী ব্যবহার করছে।

এতো গেলো তাত্ত্বিক কথা-বার্তা। নীচে দেখে নেয়া যাক এর কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যবহার

যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে -

বর্তমানে ফেসবুক থেকে শুরু করে টুটার, ইন্সট্যাগ্রাম, লিঙ্কদিন এ সবই ব্যক্তির সাথে ব্যক্তি যোগাযোগকে সহজতর করে দিয়েছে, পাশাপাশি গড়ে উঠেছে বিজনেস টু বিজনেস বা বি২বি। ব্লগিং বা ওয়েবসাইট এ আর্টিকেল পাবলিশ করার মাধ্যমে যার যার অবস্থা ও অবস্থান তুলে ধরছে যাতে করে এক ব্যবসার সাথে আরেক ব্যবসার একটা নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠছে।

ব্যক্তিগত মতামত ও পর্যালোচনা শেয়ার করার মাধ্যম -

সকল সোশ্যাল মিডিয়ারই একটি কমন অপসন থাকে, আর তা হলে মতামত দেয়া যেটা আমরা বলে কমেন্ট শেয়ারিং। কোন পণ্য বা সেবার পোস্ট সামনে আসলে দেখা যায় পণ্যটির ভালো মন্দ দিক নিয়ে মতামত দিচ্ছে ব্যবহারকারীরা। এই মতামত, আলোচনা ও পর্যালোচনা যখন বড় হতে থাকে তখন আমরা একে থ্রেড (ইন্টারনেট এ ব্যবহৃত পরিভাষা)। অ্যামাজন, ইবে’র মত জায়ান্ট ই-কমার্স সাইটগুলো এই ধরনের কাস্টমার রিভিউ’র উপর ভর করেই চলে।

বিনোদনের মাধ্য হিসেবে-

উইটিউব, ভিমো মাইস্পেস সহ যাবতীয় ইন্টারটেইনমেন্ট সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে ব্যবহারকারীরা তাদের পছন্দের নাটক, গান, ভিডিও শেয়ার করে থাকে; যাতে অন্যরা এগুলোকে উপভোগ উপভোগ করতে পারে।

এডভারটাইজিং বা বিজ্ঞাপনের সহজ মাধ্যম -

আজকালকাল আমরা ফেসবুক, ইউটিউব যে সোশ্যাল মিডিয়াই চালাইনাকেন, প্রচুর বিজ্ঞাপন আমাদের চোখে পড়ে। আগ্রহী ব্যবহারকারীরা এসব পণ্য সহজেই ওয়ার্ডার করতে পারেন।

শিক্ষায় সোশ্যাল মিডিয়া-

ইদানিংকালে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে রয়েছে নিজস্ব পেজ/একাউন্ট, যেখানে প্রতিনিয়তই পাঠদান কর্মসচূী, খোলা/ছুটির, রেজাল্ট, নোটিশসহ সকল তথ্যই শিক্ষার্থীরা যেখানেই থাকুকনা কেন - জানতে পারেন অনায়াশেই।

ভোটযুদ্ধে ব্যবহার হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া

বিগত দু’টি আমিরিকার নির্বাচনে তার স্পষ্ট প্রমাণ আমরা দেখতে পাই। ভারতের নির্বাচনেও এই মিডিয়ার বহুল ব্যবহার লক্ষ্যনীয়। ডোনাল্ড ট্র্যাম্প, জো বাইডেন, কামলা হেরিস, নরেদ্র মোদিসহ বিশ্বনেতারা তাদের পাবলিক ফাংশনে যোগদেয়ার পূর্বেই ফেসবুক বা টুইটারে একটি করে স্ট্যাটাশ শেয়ার করেন যা মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায়।

এতোসব সুযোগ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও এর অপব্যবহারও নেহায়েত কম নয়।
  • নিয়ন্ত্রণহীন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে তরুণ সমাজ অলস হচ্ছে, হচ্ছে বিদগামী।
  • অল্প বয়সী তরুণরা পড়াশুনায় অমনোযোগী হচ্ছে।
  • অফিস কর্মকান্ড বাদ দিয়ে মোবাইল বা কম্পিউটারে চ্যাটিং করে সময় ব্যয় করাটা অনেকটা নিয়মে পরিণত হয়েছে।
  • সন্ত্রাসী কর্মকান্ডেও ব্যবহার হচ্ছে এই social platform
  • টিকটক ব্যবহার করে মেয়েদের পণ্যগ্রাফী ভিডিও ধারণ ও প্রচার করে বাংলাদেশের টিকটক বাবু এখন ভারতের জেলে।
  • মিথ্যা চাটুকার বিজ্ঞাপণ দিয়ে ভেজাল পণ্য বিক্রির কথাতো সবারই জানা।

...পরিশেষে বলব, সোশ্যাল মিডিয়া মানুষের জীবনকে যেমন সহজতর করছে, তেমনি এর অপব্যবহারও বাড়ছে সমানতালে।

বিগত মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্প যেভাবে টুইটার ও ফেসবুক ব্যবহার করে আফ্র-এশিয়ানদের আক্রমণ করেছিলেন এবং বিভ্নি ইস্যুতে উশকানীমূলক বক্তব্য দিয়ে বহুদা বিভক্ত করেছিলেন গোটা আমেরিকাকে, তাতে গোটা সভ্যসমাজ হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। যার ফলে টুইটার কর্তৃপক্ষ তার আইডিটি ব্যান্ড করে দিতে বাধ্য হয়েছিল। অপ্রাপ্ত বয়স্ক বা শিশুদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে সাবধানী হতে হবে সবাইকে।

1 মন্তব্যসমূহ

Please do not share any link

নবীনতর পূর্বতন