ছোট ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য - ডিজিটাল মার্কেটিং একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার

digital-marketing

দুনিয়ায় এমন কোনো ব্যবসা প্রতিষ্টান নেই, যেখানে উক্ত প্রতিষ্ঠানটি উন্নতির দ্বিতীয় ধাপে অগ্রসর হতে চায়না। তাই, দুনিয়াজুড়ে ছোট- বড়ো সব ধরণের বেবসায়ীরা নিত্য নতুন ব্যবসায় কৌশল বা স্ট্রাটেজি ইমপ্লিমেন্ট করার চেষ্টা করে থাকেন;  কখনো অফলাইনে, কখনো  অনলাইন এ । এই অনলাইন স্ট্রাটেজিটিই হলো ডিজিটাল মার্কেটিং।

মার্কেটিং মানেই হলো - প্রচার, যেটা ছাড়া প্রসার সম্ভব নয়. 

এখন প্রশ্ন হলো - এই ডিজিটাল মার্কেটিংটা আসলে কি? কিভাবে করতে হয়, এতে লাভই বা কি ?

এই গুটিকয়েক প্রশ্নের উত্তরই খোঁজার চেষ্টা করবো আজকের এই ছোট আর্টিকেলটিতে।

ডিজিটাল মার্কেটিং কি ? 

যদি কঠিন কোনো সঙ্গায়  না যাই, তাহলে বলতে হয় - অনলাইনের মাধ্যমে যখন কোনো নিদৃষ্ট পণ্য ও সেবার প্রচার ভোক্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষে করা হয় - সেটাই হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং। 

ডিজিটাল মার্কেটিং ও ট্রাডিশনাল মার্কেটিং এর মধ্যে পার্থক্য

আগেকার দিনে যখন বিসনেস প্রসারের জন্য অনলাইন পদ্দতি ছিলোনা, তখন মানুষ পোস্টার, ফেস্টুন, লিফলেট, দেয়াল লেখন, ডোর টু ডোর ভিসিট, রেডিও-টিভি অ্যাড, বিসনেস কার্ড বিতরণ করে তাদের নিজ নিজ পণ্য বা সেবা সম্পর্কে প্রচার চালাতো। মূলত; এই পদ্দ্বতিটিকেই   আমরা বলে থাকি ট্রাডিশনাল মার্কেটিং বা অফলাইন মার্কেটিং স্ট্রাটেজি (offline marketing)।

অফলাইন মার্কেটিং এর অসুবিধা হলো; এগুলো ক্ষণস্থায়ী, ব্যায়বহুল ও সময়সাপেক্ষ বেপার। টিভিতে ১৫ সেকেন্ডের একটা অ্যাড ১ মাস রান করতে যে পরিমান অর্থ খরচ হয় তা দিয়ে একটা ছোট কোম্পানির স্টাফদের ৩ মাসের বেতন দেয়া যেতে পারে। বাংলাদেশের নামিদামি একটা ডেইলি নিউজ পেপার এ অ্যাড চালাতে কত খরচ হতে পারে, তা আশাকরি সকলেই কমবেশি জানেন।  

আরেকটি অসুবিধার কথা যদি বলি তাহলো, যতক্ষণ আপনি অর্থ, সময় ও শ্রম দিতে পারবেন এটা ততক্ষন পর্যন্তই আপনার জন্য কাজ করবে। আপনার এফোর্ট বন্ধ হলে এ পদ্দতি আর আপনার পণ্য বা সেবাকে রিপ্রেসেন্ট করেনা. 

বিকল্প হিসেবে ডিজিটাল মার্কেটিং 

আশা করি, ডিজিটাল মার্কেটিং এর সুবিধা সম্পর্কে সবাই কমবেশি জানেন। এ পদ্দতিতে, স্বল্প সময়ে, তুলনামূলক কম খরচ করে আপনার কাঙ্খিত কাস্টমার এর কাছে পৌঁছাতে পারবেন। অৰ্থাৎ খুব সহজেই আপনার কাস্টমারদের জানিয়ে দিতে পারবেন আপনার পণ্য ও সেবা সম্পর্কে, বাড়াতে পারবেন আপনার কোম্পানির ব্র্যান্ড ইমেজ। কোকাকোলা, হোলসিম, এপেক্স, ফুডপান্ডা, হাংগ্রিনাকি ইত্যাদি ন্যাশনাল ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর ব্র্যান্ড ইমেজ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে তাদের আর ডোর টু ডোর মার্কেটিং করতে হয়না। আর এ সবই সম্ভব হয়েছে ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে। 

ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিশেষ কিছু সুবিধা

  • সহজেই বিসনেস ওয়েবসাইটের জন্য অর্গানিক ট্রাফিক/ভিসিটর বা কাস্টমার নিয়ে আসা যায়
  • কম খরচ করে অনলাইন অ্যাড রান করা যায় 
  • এ পদ্দতিতে সহজেই টার্গেটেড অডিয়েন্স পাওয়া যায় 
  • বড়  ধরণের কোনো ইনস্টলেশন এর প্রয়োজন পড়েনা 
  • অফিস বা বাসায় বসে, সুবিধাজনক সময়ে কাজ করা যায়
  • দ্রুত একটি কোম্পানির ব্র্যান্ডিং করা যায়
  • সবসময় কাস্টমর্ডের সাথে একটিভ থাকা যায় 
  • যেকোনো ইনভেস্টমেন্ট এর বিপরীতে ভালো রিটার্ন পাওয়া যায় - যেটাকে আমরা ROI বলে থাকি
  • নতুন নতুন কাস্টমার্ এর সাথে বেব্সায়িক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পাশাপাশি পুরানো কাস্টোমারকদের সাথে সবসময় সংযুক্ত থাকা যায়
  • ইনস্ট্যান্ট কাস্টমার সার্ভিস প্রধান করার সহজ একটি মাধ্যম এটি|

বুঝলাম, ডিজিটাল মার্কেটিং বিসনেস প্রসারে একটি গুরুত্বপূর্ন হাতিয়ার, কিন্তু এটা কিভাবে শুরু করা যায়?

ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করতে আহামরি কিছু লাগেনা। এ বিষয়ে সঠিক knowledge, পরিকল্পনা, লোকবল থাকলেই আপনি শুরু করে দিতে পারেন-ডিজিটাল মার্কেটিং বা অনলাইন মার্কেটিং।

স্বল্প পরিসরে, আপনার যা লাগবে তাহলো;

- আপনার অবশ্যিই একটি এসইও অপটিমাইজড ওয়েবসাইট থাকতে হবে 
- সোশ্যাল মিডিয়া যেমন ফেইসবুক, টুইটার, লিঙ্কেডিন, ইউটুবে বিসনেস একাউন্ট থাকতে হবে 
- শুধু একাউন্ট বা ওয়েবসাইট থাকলেই হবেনা, এগুলোতে নিয়মিত কনটেন্ট পাবলিশ করতেহবে।

কনটেন্ট কি? কি কনটেন্ট পাবলিশ করবো?

যে বিষয় এ আপনার বিসনেস সে বিষয়ে নিয়মিত আর্টিকেল পাবলিশ করুন, আর পাবলিশড আর্টিকেলগুলোর লিংকগুলো নিয়ে আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন। কনটেন্ট হতে পারে; আর্টিকেল, কোনো ইমেজ বা ফটো, ভিডিও , ইনফোগ্রাফিক বা প্রেসেন্টেশন ইত্যাদি।

ধরুন, আপনি ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং বিসনেস করেন; এ নিয়ে একটি বা দুটি আর্টিকেল লিখতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার টাইটেল হতে পারে - "ফ্রেইট - ফরওয়ার্ডিং এর জন্য একটি নির্বরযোগ্য প্রতিষ্ঠান xyz" অথবা "ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং সেবাখাতে আমরা কি কি অসুবিধার সমুক্ষিন হচ্ছি ?" 
অথবা, এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে লিখতে পারেন "ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং কি ? কেন ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং দেশের উন্নয়ন এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ?" ইত্যাদি বিষয়ে।

ভিডিও পাবলিশিং 

ভিডিও পাবলিশিং বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ কনটেন্ট মার্কেটিং। বানিয়ে ফেলুন একটি ৫মিন. এর একটি ভিডিও ক্লিপ আর শেয়ার করে দেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। স্লাইডশো ভিডিও বর্তমানে খুবই জনপ্রিয়, মানুষ সহজেই বুজতে পারে। কার্টুন ভিডিওতে আছেই। 

ইনফোগ্রাফিক পাবলিশিং এন্ড শেয়ারিং 

বিষয়ভিত্তিক ইনফরমেশন নিয়ে গ্রাফিকাল রিপ্রেসেন্টেশনই হচ্ছে ইনফোগ্রাফিক। একটি আমদানি রপ্তানি শিপমেন্ট সফল হতে কতগুলো ধাপ পার হতে হয়, সেটা নিয়ে একটি গ্রাফিকাল ইমেজ তৈরী করে পাবলিশ করা যেতে পারে।

এতসব পরিকল্পনা, এফোর্ট, এর পিছনে একটাই কারণ, আর সেটা হলো আপনি চাইছেন - আপনার ওয়েবসাইটকে গুগল-এ রেঙ্ক করতে তাইনা! আমরা সবাই চাই, আমাদের ওয়েবসাইট টি যেন গুগল সার্চ এর প্রথম দিকে দেখায়। 

গুগল সার্চ রেজাল্ট এ যদি আমার সাইট আসে তাতে লাভ কি?

হ্যা , এটাই হচ্ছে বড় প্রশ্ন। আপনি যদি ১-২ বৎসর খাটা খাটনি করে একটি ওয়েবসাইট গুগল মামায় রেঙ্ক করতে পারেন, আপনাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হবেনা! পৃথিবীর যে প্রান্ত থেকেই আপনার বিসনেস এর কীওয়ার্ড দিয়ে কেউ সার্চ করলে  আপনি কিন্তু তাদের সামনে থাকবেন, ক্লায়েন্ট বাড়বে, বিসনেস প্রসারিত হতে থাকবে।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর কিছু ধরণ

অন্যানোদের মতো আমিও confused হয়ে যাই ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিভিন্ন ধরণ নিয়ে। একেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান একেক পদ্ধিতে এটি প্রয়োগ করে থাকে। নিচে বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি পদ্দতি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো-

এসইও 

মানে হচ্ছে “সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন”। এটি হচ্ছে সেসব কাজ, যেগুলো এপলাই করে গুগল এ কোনো ওয়েবসাইটকে  রেঙ্ক করানো হয়, ফলে আপনাকে আর টাকা খরচ করে  ট্রাফিক জেনারেট করতে হবেনা, এমনিতেই আপনার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টার্গেটেড কাস্টমার পেতে থাকবেন। "ocean freight services dhaka" আমি এই কীওয়ার্ড দিয়ে গুগল করার পর নিচের রেজাল্টগুলো দেখাচ্ছে, 
মানে হলো এই ওয়েবসাইটগুলো ভালোভাবে এসইও করা, এরাই  বেশিবেশি কাস্টমার নক পাচ্ছে। business ও  তাদেরই বেশি|
ocean freight

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বা SMM

এই পদ্দতিও অনেক বেশি কার্যকর। ফেইসবুক, টুইটার, লিঙ্কেডিন, ইনস্টাগ্রাম, পিন্টারেস্ট সহ ৫০০ এর বেশি সোশ্যাল মিডিয়া টুলস রয়েছে যা ব্যবহার করে মানুষ তাদের বিসনেস কে উন্নতির সোপানে পৌছে  দিচ্ছে ।  

আমাদের মতো thirdworld দেশগুলোতে ফেইসবুক একটি অন্যতম বিসনেস টুল হিসেবে কাজ করছে। মনে রাখা দরকার, ফেইসবুক শুধু ব্যাক্তিগত আপডেট, ছবি, ভিডিও পোস্ট করার বিষয় নয়, এটি তার চেয়ে বেশি কার্যকর বিসনেস প্রমোশনে।  

ইমেইল মার্কেটিং 

এটিও ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি পুরাতন মেথড যা এখনো কাঙ্খিত বিসনেস নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।  আপনার কাছে রক্ষিত বহুদিনে জোগাড়করা বিসনেস কার্ডগুলো থেকে সহজেই একটি ইমেইল লিস্ট বানাতে পারেন এবং  আপনার প্রোডাক্ট ও সার্ভিস নিয়ে তাদেরকে ইমেইল মেসেজ পাঠাতে পারেন।

পরিশেষে, বলবো বর্তমান সময়ে যদি কম সময় ও কম  অর্থ ব্যায় করে ছোট ও মাঝারি আকারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নতি করতে হয়, তাহলে ডিজিটাল মার্কেটিং এর কোনো বিকল্প নেই. সঠিক পরিকল্পনা, লোকবল নিয়োজিত করে এখনই নেমেপড়া দরকার। ফেইসবুক বিসনেস পেজ, গুরুপ বা সুন্দর একটি ওয়েবসাইট থাকলেই হবেনা, ভালো একটি বিসনেস নেটওয়ার্ক গড়েতোলার লক্ষে নিয়মিত কনটেন্ট পাবলিশ করে যেতে হবে. ভিসিটরদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে
 
ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্রাটেজি নিয়ে এই আর্টিকেল এ আলোচনা করা হয়নাই, এ নিয়ে পরবর্তী একটি আর্টিকেল পাবলিশ করার ইচ্ছা আছে

এ সংক্রান্ত কোনো কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট এ জানাতে পারেন উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please do not share any link

নবীনতর পূর্বতন